শারীরিক ব্যায়াম যেমন শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি মস্তিষ্কের ব্যায়াম বা ব্রেইন এক্সারসাইজ ও মস্তিষ্ককে সুস্থ ও শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। তাই একজন মানুষকে নিয়মিত শারীরিকভাবে পাশাপাশি মস্তিষ্কের বেয়ামও করা প্রয়োজন। নিচে নয়টি মস্তিষ্কের ব্যায়ামের কথা উল্লেখ করা হলো যেগুলো আপনার সৃজনশীলতাকে বৃদ্ধি করবে, সমস্যার সমাধানের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলবে, এবং তথ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
১. অভ্যাস বদলানোর অনুশীলন
যে কাজটি আপনি নিয়মিতই করে থাকেন সেই কাজটি অন্যভাবে করার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ আপনার অভ্যাসটাকে পরিবর্তন করুন। নতুন কিছু করার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্ক আরো নতুনভাবে চিন্তা করবে এবং সক্রিয় হবে। এই ছোট ছোট পরিবর্তন গুলোই আপনার মস্তিষ্ককে আরো সক্রিয় করে তুলবে।
২. মনে মনে অঙ্গ করা
এখনকার মানুষ ক্যালকুলেটর আসার পর থেকে মনে মনে কোন ক্যালকুলেশন করতে চায় না। যার ফলে তাদের ছোটখাটো প্রবলেম করতে হয়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত ছোট ছোট ক্যালকুলেশন গুলো মনে মনে করে ফেলেন তাহলে এটা আপনার মস্তিষ্ককে আরো সমস্যার সমাধানের জন্য উপযোগী করে তুলবে। তাই ছোট ছোট অঙ্গ গুলো মনে মনে করুন।
৩. তিন মিনিটের গল্প বলা।
কোন একটা টপিক নির্বাচন করুন এবং সেই টপিকের উপর তিন মিনিটের একটা ছোট গল্প বলার চেষ্টা করুন। এতে আপনার মন বা মস্তিষ্ক চিন্তা করবে শব্দ খুঁজবে যার ফলে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়বে এবং চিন্তা করার দক্ষতা ও বৃদ্ধি পাবে।
৪. ইন্দ্রিয় গুলো সক্রিয় করুন
দিনে অন্তত দুই মিনিটের জন্য হলেও আপনার চারটি ইন্দ্রিয় কে কাজে লাগান। অর্থাৎ আপনি চারপাশ থেকে কি দেখছেন? কি শুনছেন? কি গন্ধ অনুভব করছেন? এবং আশপাশ থেকে কি অনুভব করছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন। এটা আপনার মনোযোগ বানাতে সাহায্য করবে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে।
৫. শব্দ সংযোগ খেলা
একটি শব্দ মনে মনে ভাবুন এবং সেই শব্দের সাথে সম্পর্কিত আরো .২০ টি শব্দ দ্রুত বলার চেষ্টা করুন। এটা আপনার চিন্তা করার গতি আরো বাড়িয়ে তুলবে। যেমন নদী এর সাথে সম্পর্কিত শব্দগুলো হলো পানি, স্রোত, ঢেউ, মাঝি, মাছ, নৌকা, সেতু, পাখি ইত্যাদি। এই শব্দগুলো বিরতিহীনভাবে বলার চেষ্টা করুন।
৬. মেমোরি টেস্ট
কিছু কঠিন শব্দ দেখুন। ৬০ সেকেন্ড ধরে সেটা পর্যবেক্ষণ করুন। এবং চোখ বন্ধ করে কি কি দেখলেন সেটা মনে করার চেষ্টা করুন। এরপরে হিসাব করুন যে আপনি কতগুলো শব্দ মনে করতে পেরেছেন। এটা নিয়মিত চর্চা করলে আপনার মনে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
৭.সকালে অল্প সময় হলেও হাঁটুন
প্রতিদিন সকালে কিছু সময়ের জন্য হাটুন। এবং চারপাশটাকে দেখুন। এটা আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে এবং মনোযোগ আরো উন্নত করে তুলবে স্মৃতিশক্তি ভালো রাখবে।
৮. মিরর রাইটিং,
আপনি চাইলে কিছু মজার কাজ করেও আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে পারেন। তার মধ্যে একটি ব্যায়াম হল মিরর রাইটিং। অর্থাৎ আয়নার সামনে যেমন একটি শব্দ রাখলে সেটা উল্টো হয়ে যায় আপনিও তেমনি একটি উল্টো শব্দ লেখার চেষ্টা করুন যেটা আয়নার সামনে ধরলে সোজাভাবে দেখায়। যেমন ‘ মলক’ যেটা আয়নার সামনে ধরলে কলম দেখাবে।
৯. মাইন্ড ম্যাপ চ্যালেঞ্জ
দিনের শুরুতেই ৫ মিনিট মাইল্ড ম্যাপ চ্যালেঞ্জ করুন। একটি খাতায় একটি বিষয় নির্বাচন করুন সেই বিষয় সম্পর্কে তো বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া যোগ করুন। এটি একটি মাইন্ড ম্যাপ তৈরি হবে। যেমন আপনি যদি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোন বিষয়ে লেখালেখি করেন তাহলে আপনি এর সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন পুষ্টিকর খাবার, প্রোটিন গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। এর ফলে আপনার সৃজনশীলতা, সমস্যার সমাধানের দক্ষতা ও দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে চাইলে উপরের ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করতে পারেন। এটা আপনার শরীর এবং মনকে দুটোই ভালো লাগবে। এবং আপনার সৃজনশীলতা সমস্যার সমাধানের দক্ষতা, কোন কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা এবং মস্তিষ্কে তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে। ধন্যবাদ।