✳️ মুহাম্মাদ ﷺ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ✳️
✴️ ভূমিকা : যুগে যুগে মানুষ যখনই আল্লাহর অবাধ্যতায় ডুবে যায় , তখন আল্লাহ তাদের হেদায়েতের জন্য একজন নবী বা রাসূল প্রেরণ করেন । ঠিক তেমনই ইসা (আ) এর ঊর্ধাকাশে গমনের পর মানুষ যখন চরম শিরক, পাপাচারে লিপ্ত হয়ে সত্যিকার অর্থেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের শুরু করেছিল। তখনই আল্লাহ তাদের হেদায়েতের জন্য শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা ﷺ কে পাঠালেন পুরো দুনিয়ার জন্য রহমত স্বরূপ। যেমন আল্লাহ বলেন :
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ
অর্থ : আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। (আম্বিয়া : ১০৭)
✴️ জন্ম ও বংশ পরিচয় : মহানবী ﷺ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ( হস্তি বছর) বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম ছিল আমিনা। তার বংশধারা হযরত ইসমাইল (আ) এর সাথে মিলে যায় ।
✴️ শৈশব ও কৈশোর : হজরত মুহাম্মাদ ﷺ মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেই তার পিতাকে হারান । ততকালীন আরবের প্রথা অনুযায়ী পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত ধাত্রী হালিমার কাছে লালিত-পালিত হন । এরপর মাতৃক্রোড়ে ফিরে আসেন । কিন্তু তার এক বছর পরই তার মাতা ও মারা যান। এরপর তিনি তার দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে লালিত-পালিত হতে থাকেন। কিন্তু তার বয়স যখন আট তখন তার দাদাও মারা যায় । এরপর তিনি তার চাচা আবু তালিবের কাছে বড় হতে থাকলেন । ছোটবেলাই তার নবী হওয়ার অনেক আলামত ও মুজিযা প্রকাশ পেয়েছিল । তার বয়স যখন পনেরো তখন হরবুল ফিজারের যুদ্ধের ভয়াবহতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন ।
✴️ যৌবন : হরবুল ফিজারের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করার পর আরবদের দুঃখ দুর্দশা দুর করার জন্য হিলফুল ফুজুল নামে একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সারা আরবে তার সততার কথা ছড়িয়ে পড়েছিল । তিনি আল আমিন নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এছাড়া বিশ বছর বয়সে মক্কার ধনবতী নারী খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসায় নিযুক্ত হন। এবং পরবর্তীতে পঁচিশ বছর বয়সে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
✴️ নবুয়ত লাভ : চল্লিশ বছর বয়সে একদিন হেরা গুহায় তার নিকট আল্লাহর বার্তাবাহক জিব্রাইল (আ) তার নিকট আগমন করেন এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর বাণী কুরআনুল কারীম তার উপর নাযিল হওয়া শুরু হয় । এর মাধ্যমে তিনি নবুয়ত লাভ করেন ।
✴️ রিসালাতের প্রচার : নবুয়ত লাভের পর তিনি গোপনে ইসলাম প্রচার শুরু করেন প্রথমে ঈমান আনলেন স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা) । তারপর চাচাত ভাই আলী, বন্ধু আবু বকর, কৃত দাস (পরে মুক্ত প্রাপ্ত) যায়েদ (রা) ইসলাম গ্রহণ করলেন । এভাবে গোপনে ইসলাম প্রচার চলে তিন বছর। তারপর তার উপর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করার জন্য নির্দেশ আসে । প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করার সাথে সাথে তার ও মুসলমানদের উপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন ।
✴️ হিজরত : কাফিরদের নির্যাতনের মাত্রা যখন অসহনীয় হয়ে পড়লো তখন তিনি ইয়াসরিব (মদিনা) শহরে হিজরতের সিদ্ধান্ত নিলেন । এবং ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদীনায় হিজরত করেন । পথিমধ্যে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হলেও তিনি আল্লাহর সাহায্যে বেঁচে যান। মদীনায় অনেকে তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।
✴️ মক্কা বিজয় : কাফিরদের সাথে অনেক গুলো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অষ্টম হিজরীতে বিনা রক্তপাতে মহানবী সাঃ মক্কা বিজয় করেন । মক্কা বিজয়ের পর তার উপর নির্যাতনকারীদের ক্ষমা করে দিয়ে ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ।
✴️ ওফাত : সকল জাহেলিয়াত দূর করে নবুয়াতের দায়িত্ত্ব সঠিক ভাবে পালন করে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ৬৩ বছর বয়সে তিনি সকল উম্মাতে মুহাম্মদীকে এতিম করে ওফাত (পর্দা) নেন ।
✴️ উপসংহার : রাসূল সাঃ এর জীবন আদর্শ হলো মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ট জীবন আদর্শ। আমাদের তাকে সর্বোচ্চ অনুসরণ ও ভালোবাসা উচিত। আল্লাহ বলেন :
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর রসূলের আনুগত্য কর। (সূরা মুহাম্মাদ:৩৩)