বর্তমান এই আধুনিক বিশ্বে আমরা যদি বলি বিশ্বের বড় টেক জায়েন্ট কোম্পানির কথা তবে ক্লাস ফাইভে পড়া একজন বাচ্চাও বলবে সেটা হল google. কারণ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে গুগল এমন একটি শক্তিশালী জায়গা দখল করে নিয়েছে যে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সেই জায়গা দখল করতে এখনো অনেক দেরি।
আধুনিক এই যুগে টেক জয়েন্ট কোম্পানি গুগল তাদের পণ্যের মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে। তার মধ্যে গুগলের অন্যতম আকর্ষণীয় ফিচার হলোঃ গেম চেঞ্জিং সার্চ অ্যালগরিদম। আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন জিনিস জানার প্রয়োজন হলে আমরা নির্দ্বিধায় গুগলে চলে যাই। কারণ যে জিনিস আমি আশপাশের মানুষের কাছ থেকে পাবো না সেটা আমরা নির্দ্বিধায় গুগলে পেয়ে যাই। গুগলের এই সার্চ ইঞ্জিন আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে। এই পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট আছে আমরা হয়তো সেগুলোর নামটা পর্যন্ত জানিনা। কিন্তু যদি আমাদের অজানা একটা জিনিস জানার প্রয়োজন হয় গুগলে সার্চ করলেই সেটা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পেয়ে যাই।
গুগলের সার্চ অ্যালগরিদম ছাড়াও আরো যুগান্তকারী কিছু আবিষ্কার হল মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রয়েড এবং ওয়েব ব্রাউজার ক্রোম অ্যাপ্লিকেশন। এছাড়াও google এর আরো অনেক পণ্য আছে। কিন্তু অনেক সময় গুগল নিজেদের কিছু পণ্য বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। এমন অনেক জনপ্রিয় পণ্য আছে যেগুলো মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, কিন্তু নিজেদের সেবাকে আরো উন্নত করার জন্য গুগল গুলোকে বাজার থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
Google এই আধুনিক দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য গত বছরও সাতটি পণ্য বাতিল বা বন্ধ করে দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছে, পণ্যগুলোর কৌশলগত পুনর্গঠন কিংবা ব্যবহারকারীর আগ্রহের ঘাটতি। চলুন জেনে আসা যাক সেই সাতটি পণ্যের কথাঃ
১। গুগল পটকাস্ট
২০১৮ সালের দিকে গুগল তাদের নতুন একটি সেবা চালু করে, যেটার নাম ছিল গুগল পডকাস্ট। সহজ ডিজাইন ও গুগল সার্চ এর ইন্টিগ্রেশন এর কারণে বাজারে এই পণ্যটির জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু গুগল আবার ইউটিউব মিউজিক পডকাস্ট চালু করে। যার ফলে গুগল বোর্ড কাজ থেকে মানুষ সরে গিয়ে youtube এ চলে যায়। যার ফলে ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা মানুষের কাছে কমতে থাকে। শেষে google বাধ্য হয়ে গত বছর এপ্রিল মাসের দিকে এসে পার্টি বন্ধ করে দেয়। এবং youtube মিউজিক কে পডকাস্ট শোনা ও হোস্টিং পরিষেবা চালানোর ব্যবস্থা করে।
২। ক্রোমকাস্ট
মোবাইলের পর্দা কে সরাসরি টিভি কিংবা অন্যান্য ডিভাইসে চালানোর জন্য ২০১৩ সালের দিকে গুগল একটি নতুন ফিচার চালু করে যার নাম দেয় google ক্রোমকাস্ট। বলা চলে গুগলের সফল পণ্যগুলোর তালিকায় এর অবস্থান শীর্ষের দিকেই রয়েছে। কারণ বাজারে এটি প্রায় ১০ কোটি ইউনিটের মতো বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের দিকে গুগল আরেকটি নতুন ফিচার চালু করে যার নাম দেয় google টিভি স্ট্রিমার। যেটি ক্রোম কাস্টার থেকেও আরো উন্নত এবং এ আই সাপোর্ট নিয়ে এসেছে। তাই গুগল তার পুরনো টুল ক্রোমকাস্টকে বন্ধ করে দেয়।
৩। কিন
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে গুগলের একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম আছে, যেটার নাম কিন। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্লাটফর্মটি ২০২০ সালের দিকে চালু হয়। এটি পিন্টারেস্টের মতো একটি ওয়েবসাইট। কিন্তু গত বছর মার্চ মাসের দিকে গুগল এটিকে বন্ধ করে দেয়। 2021 সালের পরের থেকে এটার কোন হালনাগাদ বা আপডেট হয়নি। ধারণা করা হয় যে প্রিন্টারেস্টের মত জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না এ ধারণা নিয়েই গুগল এটিকে বন্ধ করে দেয়।
৪। গুগল ওয়ান ভিপিএন
Google তার প্রিমিয়াম মেম্বারদের জন্য একটি ভি পি এন পরিষেবা চালু করে, যেটার নাম গুগল ওয়ান ভিপিএন। কিন্তু এটা গত বছর ২০২৪ সালের জুনের দিকে বন্ধ করে দেয় গুগল। কারণ হিসেবে তারা দেখায়, এটার ব্যবহারের সংখ্যা খুবই কম ছিল এ কারণে তারা এটা বন্ধ করে দেয়।
৫। জ্যামবোর্ড
গুগল জ্যামবোড ছিল 4K টাচ স্ক্রিন হোয়াইটবোর্ড ডিভাইস, যা মূলত শিক্ষার ক্ষেত্রে এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। ২০১৬ সালের দিকে চালু করা হয়। এর মূল্য ছিল 4999 ডলার। কিন্তু গুগলের পরেও আরো অনেক জনপ্রিয় এবং কম মূল্যের আধুনিক হোয়াইট বোর্ড টুলস বাজারে থাকায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে গত বছর অক্টোবরের দিকে গুগল এটি বন্ধ করে দেয়।
৬। জ্যামবোর্ড অ্যাপ
জ্যাম বোর্ডের সঙ্গেই ২০১৬ সালের দিকে google এর অ্যাপ সেবা চালু করে। এবং জ্যাম বোর্ড বন্ধ করার পরও google এর অ্যাপ পরিষেবা চালু রেখেছিল। কিন্তু পরে আধুনিক অ্যাপ গুলোর সাথে টিকে থাকতে না পেরে google এটিকে ২০২৪ সালের শেষের দিকে একদম বছরের শেষ দিনে ৩১শে ডিসেম্বর বন্ধ করে দেয়।
৭। ড্রপক্যাম
google ড্রপ ক্যাম্প মূলত চালু করা হয়েছিল রিয়েল টাইম ভিডিও স্ট্রিমিং এর জন্য। এটি সহজ সেটআপ এবং রিয়েল টাইম ভিডিও স্ট্রিমিং এর জন্য অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ২০০৯ সালের দিকে এটিকে চালু করা হয়। কিন্তু গত বছরে বাজারে টিকে থাকতে না পেরে google এটা কে বন্ধ করে দেয়।