বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই চাকরিজীবী । আর এই চাকরিজীবী মানুষের ভিতরে অর্ধেকের বেশি মানুষই বেসরকারি কোম্পানিতে বা গার্মেন্টসে চাকরিজীবী রয়েছে। আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন যেখানে ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হওয়ার থেকে মানুষ চাকরি করাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কারণ ব্যবসা করা কিংবা উদ্যোক্তা হতে গেলে সাথে সাথে ফল পাওয়া যায় না, এবং এ কাজে কোন নিশ্চয়তা থাকে না। তাই আজকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই চাকরির উপর নির্ভরশীল। যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের চাকরি চলে যাওয়া নিয়ে তেমন টেনশনে থাকতে হয় না। কারণ তাদের চাকরি কারও হাতের উপরে থাকে না।
কিন্তু যারা বেসরকারি চাকরি করেন বা গার্মেন্টস শিল্পে চাকরি করেন তাদের চাকরির নিশ্চয়তা থাকে না। হঠাৎ করেই তাদের চাকরি যখন তখন চলে যেতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত শ্রেণীর। তাই তাদের হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়াটা খুবই চিন্তার এবং বেদনার একটা বিষয়। এছাড়াও কোম্পানির আর্থিক সংকট দেখা দিলে হঠাৎ করে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বেসরকারি চাকরিজীবীদের বিনা নোটিশে একমাত্র আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়াটা খুব অস্বাভাবিক কোনো বিষয় না। এখন প্রশ্ন হল এমন সময় আপনি কি করতে পারেন? চলুন জেনে আসা যাক।
১। নিজেকে শান্ত রাখুন
চাকরি চলে যাওয়াটা আপনার জন্য খুবই একটি বেদনার বিষয় হতে পারে। কারণ একমাত্র এই চাকরি দিয়েই আপনার পুরো পরিবারটাই চলত। তাই একমাত্র আয়ের উৎস কে বন্ধ হয়ে যাওয়া খুব চিন্তার একটা বিষয়। এমন পরিস্থিতিতে আপনার প্রথম কাজই হলো নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখুন। কারণ আপনি রেগে গিয়ে কিংবা হতাশ হয়ে যদি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তবে সেটা আপনার ক্ষতির কারণ ও হতে পারে। তাই সর্বপ্রথম আপনি নিজেকে শান্ত রাখুন এবং নিজের পড়ে সম্পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখুন। কারণ মানুষের দুঃখের সময় সারা জীবন থাকে না, কারণ দুঃখ কেবল ক্ষণিকের একটা সঙ্গী মাত্র।
২। পরিবারের সাথে এই বিষয়টা আলোচনা করুন
যে কোন পরিস্থিতিতেই সবার আগে আপনার মনোবল কে বৃদ্ধি করতে এগিয়ে আসবে আপনার পরিবারই। তারা আপনার মনোবলকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। এবং আপনার এই কষ্টের কথা পরিবারের কাছে শেয়ার করার মাধ্যমেও আপনার মনো হালকা হবে। তাই সব বিষয় আপনার পরিবারকে খুলে বলুন।
৩। পরিচিত আত্মীয়দের সাহায্য চান
আমাদের সবার পরিবারেই কমবেশি এমন কিছু মানুষ থাকে যারা আপনাকে কোন না কোন ভাবে সাহায্য করতে পারে। যেমনঃ তারা আপনাকে ভালো পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারে অথবা আপনার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারে। বিভিন্ন ভাবে তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। তাই আপনি এমন কিছু পরিচিত জনের তালিকা তৈরি করুন। এবং সিদ্ধান্ত নিন যে কার কাছে কোন ধরনের সাহায্য চাইলে আপনি সব থেকে বেশি উপকৃত হবেন। এমন কোন মানুষের কাছে সাহায্য চাবেন না যে আপনাকে ঠকাতে কিংবা প্রতারিত করতে পারে। তাড়াহুড়ো করে কখনো ভুল সিদ্ধান্তে পা দিবেন না। তাই এমন মানুষের কাছে সাহায্য চান যে আপনার জন্য কঠিন সময়ে কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
আর আপনি যদি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষে থাকেন, তবে আপনাদের একটা বড় সমস্যা হলো যে আপনারা অন্যের কাছে সাহায্য নিতে চান না। কিন্তু মাথায় রাখবেন সাহায্য ছাড়া কোন মানুষই চলতে পারে না। তাই কখনো আপনার পরিচিত মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না।
৪। খরচ কমিয়ে আনুন
যেহেতু আপনি পরিবারের একমাত্র উপার্জন কোন ব্যক্তি। আর আপনার উপার্জনের একমাত্র পথই বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাই আপনি আপনার ভাইকে যতটুকু সম্ভব কমিয়ে আনুন। শুধু যেটুকু আপনার জন্য আবশ্যক সেই বাড়িটুকুই করুন, যতদিন না আপনার একটা ব্যবস্থা হয়ে যায়।
৫। নতুন চাকরির খোঁজ করুন
আপনি যেই কাজে পারদর্শী, কিংবা যে কাজ আপনি করে এসেছেন সে ধরনের কাজের বিজ্ঞপ্তি উপর সর্বদা নজর রাখুন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন লিঙ্ক ইন সহ বিভিন্ন জায়গায় আপনার সিভি আপলোড করে রাখুন। এবং আপনার চেনাজানা পরিচিতজনদের কাছে বলে রাখুন।
৬। সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রাখুন
আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন আপনার সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রাখুন। কারণ তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আপনাকে হয়তো এমন কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান যেটা আপনার জন্য সাময়িক কষ্টের কারণ হলেও দীর্ঘ সময়ে আপনাকে অনেক কিছুতে নিয়ে যাবে তাই কখনো নিরাশ হবেন না। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখুন আর আপনি যদি মুসলমান ধর্মের হয়ে থাকেন তবে দৈনিক নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
পরিশেষে একটা কথাই বলতে পারি যে আমি হয়তো আপনার চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারব না। কিন্তু আপনি যদি উপরের নির্দেশনা গুলো মেনে নিজের উপর সম্পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখেন তবে নিশ্চয়ই আপনি অল্প দিনের মধ্যে এই খারাপ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবেন। আর এক জায়গায় চাকরি চলে গেলে নিজের ওপর হতাশ হবেন না। অন্য জায়গায় চেষ্টা করতে থাকুন। হয়তো মহান রাব্বুল আলামিন আপনাকে এই চাকরি থেকে বের করে আরো কোন বড় চাকরিতে নিয়ে যেতে চান তাই সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।