ফটোস্ট্যাট বা জিরোগ্রাফি (Xerography) হলো তরল কালির ব্যবহার ব্যতিরেখে কোনো প্রমাণপত্রের হুবহু নকলপত্র তৈরি করার এক ব্যবস্থা। একে শুকনো-লেখাও (Dry Writing) বলা যেতে পারে। ফটোস্ট্যাট মেশিনে স্থির বিদ্যুৎকে (Static electricity) কাজে লাগানো হয়। সেলিনিয়াম (Selenium) নামক একটি মৌলিক পদার্থের বিশেষ
ধর্মের উপর তা নির্ভর করে। সেলিনিয়ামের উপর যখন আলোক রশ্মি
পতিত হয় তখন তার বৈদ্যুতিকরোধ হঠাৎ কমে যায় ।
কোনো প্ৰমাণপত্ৰ (Document) কিংবা বইয়ের পৃষ্ঠার কপি (নকল পত্র) করবার সময় অপারেটর বা মেশিনচালক ঐ পৃষ্ঠাটিকে একটি আনুভূমিক কাঁচের জানালার উপর উপুড় করে রাখে। একটি সুইচ টিপে মেশিনটিকে চালু করা হয়। একটি উজ্জ্বল আলো প্রমাণপত্রটির উপর জ্বলে ওঠে, আর তখন প্রমাণপত্রটির প্রতিবিম্ব একটি লেন্সের মধ্য দিয়ে অভিক্ষিপ্ত হয়ে অতি- মসৃণ ও সেলিনিয়ামের প্রলেপ লাগানো একটি পাত অথবা চোঙাকৃতি (Cylindrical) ড্রামের উপর গিয়ে পতিত হয় ।
পাত কিংবা ড্রামটি স্থির-বিদ্যুৎ কর্তৃক আহিত (Charged) করা হয়। প্রমাণপত্রের সাদা অংশ থেকে প্রতিফলিত আলো সেলিনিয়াম পাতের যে স্থানে পতিত হয় সেই স্থানের বৈদ্যুতিক রোধ কম হয়ে যায়। ঐ স্থানের সেলিনিয়ামের চার্জ বা আধান তখন মাটিতে চলে যায়। প্রমাণপত্রের (Document) কালো অংশ থেকে কোনো আলো সেলিনিয়ামের প্লেটে পৌছায় না। ফলে সেই অংশের সেলিনিয়ামের চার্জ স্থির থেকেই যায়, অর্থাৎ চার্জের কোনো পরিবর্তন হয় না। এরপর প্লেটটিকে এক বিশেষ ধরনের কালো গুঁড়ো কালি দিয়ে আবৃত করা হয়। প্লেটের যেখানে স্থির বৈদ্যুতিক চার্জ বর্তমান থাকে, গুঁড়ো কালি সেখানেই লেগে থাকে। ফলে প্রমাণপত্রের এক প্রতিবিম্ব সেলিনিয়াম প্লেটে গুঁড়ো কালিতে তৈরি হয় ।
এরপর এক খণ্ড সাদা কাগজ প্লেটের উপর চেপে ধরা হয়। প্লেটে যে ধরনের চার্জ থাকে, তার বিপরীত-ধর্মী চার্জ ঐ কাগজে আবেশ (Introduction) প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। এই চার্জ তখন প্লেট থেকে কালির গুঁড়োকে আকর্ষণ করে। সেলিনিয়াম প্লেট থেকে কালির গুঁড়ো কাগজে লাফিয়ে চলে আসে। এর ফলে প্রতিবিম্ব কাগজে স্থানান্তরিত হয়। মেশিন থেকে বের করবার আগেই কাগজকে উত্তপ্ত করা হয়। উত্তাপের ফলে গুঁড়ো কালি গলে গিয়ে কাগজের গায়ে স্থায়ীভাবে আটকে থাকে এবং মূল জিনিসের এক প্রতিলিপি তৈরি হয়ে যায় ।