রমজান এক মাস সিয়াম সাধনার পর পার হলো ঈদ। আর এর সঙ্গে রমজান মাসকে বিদায় আর শাওয়াল মাসকে স্বাগত জানিয়ে ঈদ উদযাপিত হলো নানান আয়োজনের মাধ্যমে। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। আর এই আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো বাহারি খাবার। খাওয়া-দাওয়া, ব্যস্ততা , বেড়ানো এবং হরেক রকমের উপভোগ এসবেই শেষ হলো ঈদ আনন্দ। এখন সময় এসেছে আবার নতুন করে স্বাভাবিক অভ্যাস আর আগের জীবন যাত্রার রীতিনীতিতে ফিরে যাওয়ার। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব গুলোর মধ্যে প্রধান উৎসব হলো ঈদ। আত্মশুদ্ধি ও আত্মত্যাগের মহিমায় রমজান মাসের পর খুশির বার্তা নিয়ে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। নতুন পোশাকের পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ হিসেবে থাকে ঈদের বিশেষ খাওয়া-দাওয়া। অনেক সময় স্বাস্থ্যের কথা মাথায় না রেখে মুখরোচক খাবারের দিকেই বেশি ঝুঁকে যায় আমরা। আর এটিই বয়ে আনতে পারে নানা বিধ বিপদ।
দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর হঠাৎ ঈদের দিনের অতিরিক্ত বা অনিয়ন্তিত ভুরিভোজ শরীরকে অনেক সময় ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। কারণ ঈদের সময় খাওয়া-দাওয়া একটু বেশিই হয়ে যায়। ঈদ পরবর্তী আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে একটু বেশি বেশি যেতে হয়েছে। যাওয়া হয়েছে বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতেও। জীবনে যোগ হয়েছে আরো আনন্দ। নিজ বাড়িতে মজার মজার খাবার তো খাওয়া হয়েছেই, পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে প্রায় সারাদিনই টুকটাক এটা সেটা খাওয়া হয়েছে এবং হোটেল রেস্তোরাঁ গুলোতেও আমরা সুস্বাদু খাবার উপভোগ করার জন্য ভিড় জমাচ্ছি। ঈদের দিন গুলোতে যে হরেক রকমের মজার খাবার রান্না হবে, তা যে একেবারে খাওয়া যাবেনা তা নয়। মূল সমস্যাটা নিঃসন্দেহে খাবারের পরিমাণ। মনে রাখা উচিত রমজান মাসকে শরীর দীর্ঘসময়ের জন্য উপোস অবস্থায় থাকে এবং নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পরিপাকতন্ত্রের কিছুটা সময় লাগতে পারে। এক মাসের পরিমিত খাবারের নিয়ম ভেঙ্গে হঠাৎ করে মুখরোচক এবং রিচ-ফুড খাওয়ার ফলে বদহজম গ্যাস, পেট খারাপ, ওজন বৃদ্ধি, প্রেসার বেড়ে যাওয়া এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধির মতো সমস্যার সম্মুখীন হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই ঈদ উৎসবে খাওয়া দেওয়াই যা একটু সচেতনতা যা ঈদ পরবর্তী বিভিন্ন ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে আমাদের রক্ষা করবে। প্রায় ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত খাবারের মাধ্যমে ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ আগের তুলনায় হয়তো বেড়ে যায় , এটাই স্বাভাবিক। ঈদের খাবার কে মুখরোচক করতে গিয়ে নানারকম ঘি ও মসলা ব্যবহার করা হয়। আর এতেই খাবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বেশ কিছু অসুস্থতার যোগসূত্র রয়েছে। যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক ইত্যাদি। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে আনুপাতিক হারে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঈদের এই সময়টা খাবার ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হাটের রোগীদের সমস্যা বা জটিলতা বেড়ে দিতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধের পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগীদের জটিলতা প্রশমনে এ সময় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি রমজান পরবর্তী সময়ে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্রিয় রাখাও অতীব ও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারে। এটি স্বাস্থ্যকর ও ওজন বজায় রাখতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে ।
যারা নিয়মিত হাঁটেন, ব্যায়াম করতেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন ,কিন্তু ঈবেতা বজায় রাখতে পারেননি , তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার পুনরায় অভ্যাসে ফিরে যেতে শুরু করুন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধীরে ধীরে চালু করা উচিত। হাঁটতে , ব্যায়াম করতে যদি কোন অসুবিধা অনুভব হয় , যেমন : সহজে হাঁপিয়ে যাওয়া বা বুকে ব্যথা অনুভব হওয়া তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। ঈদ পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেগুলো থেকে ভালো থাকা সম্ভব:
১. খাওয়া দাওয়া ব্যাপারে পরিমাণটা বজায় রাখতে হবে। ঈদের আনন্দে হঠাৎ করে বেশি খাবেন না। ধীরে ধীরে খাদ্যের পুষ্টিগুণ বিচার করে , ক্যালরি হিসাব করে খাবার খান। কোথাও বেড়াতে গিয়ে হোটেল রেস্তোরাঁ বা বন্ধু-বান্ধবের বাসায় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দাওয়াতে গেলে অতিভোজন পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। হয়তো খাবার টেবিলে হরেক রকমের খাবার সাজানো থাকবে। কিন্তু খেতে বসলেই সব খেতে হবে , তা ঠিক নয়।
২. রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত ২ ঘন্টার পর বিছানায় যাবেন । খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করবেন না। এতে হজম রস গুলো পাতলা হয়ে যায় , ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত আধাঘন্টা পর পানি পান করুন।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে বেশি বেশি পানি, শাক-সবজি, সালাত, ইসবগুলের ভুষি, বেল, পেঁপে, দুধ, দই ইত্যাদি খেতে পারেন। মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি বা কাঁচ্চি ইত্যাদি কম খাওয়া উচিত।
৪. ডায়রিয়া, আমাশয় প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। বাইরের খাবার যেমন: চটপটি, ফুচকা, হালিম ইত্যাদি পরিহার করুন। প্রয়োজনে এসব খাবার ঘরে বানিয়ে নিন।
৫. উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা লবণযুক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয চলুন। নিয়মিত রক্তচাপ চেক করবেন।
৬. ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখতে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। কম তিনি যুক্ত খাবার খাবেন । রক্তের সুগার মাঝেমধ্যে চেক করে দেখবেন।
৭. কিডনির সমস্যা থাকলে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন: ডিম, মাছ, মাংস অবশ্যই পরিমাণ মতো এবং ডাক্তারের নির্দেশমতো খেতে হবে।
৮. বেশি করে বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার ডাবের পানি, বাসায় বানানো দেশি ফলের জুস খান। পানি শূন্যতার অভাব দূর করনের জন্য বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করবেন । এসব বিষয়ে যত্নবান হোন।
রমজান পরবর্তী খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে অনিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা, সংযম এবং ভারসাম্যের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হওয়া উচিত। যা রোজার মাসের একটি মৌলিক শিক্ষা। এর পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চেকআপ করিয়ে নিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবারকে নিয়ে সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন। ঈদ পরবর্তী যেকোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ থাকুন মনে রাখবেন প্রতিকার নয় এসব ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
উত্তরটি পছন্দ হলে একটি আপ ভোট প্রদান করুন। আর এরকম পরামর্শের জন্য ইজি আনসার এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।